Home জাতীয় ৪৭ বছরে প্রথম বড় পরিবর্তন: সমুদ্র ট্রাইব্যুনাল গঠনের অঙ্গীকার এখনও অপূর্ণ!!

৪৭ বছরে প্রথম বড় পরিবর্তন: সমুদ্র ট্রাইব্যুনাল গঠনের অঙ্গীকার এখনও অপূর্ণ!!

আইন সংস্কারে নতুন পরিভাষা ও প্রতিশ্রুতি

0
GeoBangla_Law

২০২১ সালে বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার পর টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট ১৯৭৪-এর যুগান্তকারী সংস্কার আনে। সংশোধনীর ফলে জাতীয় আইন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, বিশেষ করে জাতিসংঘের সমুদ্র আইন কনভেনশন (UNCLOS)-এর সাথে। এর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসা এবং সমুদ্র শাসন ব্যবস্থার আধুনিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়। সংবিধানের ১৪৩(২) অনুচ্ছেদও পূরণ হয়, যা সংসদকে দেশের আঞ্চলিক জলসীমা ও মহীসোপানের সীমা নির্ধারণের ক্ষমতা প্রদান করে।

আধুনিক পরিভাষা, নতুন দিগন্ত

সংস্কারকৃত আইনে কন্টিনেন্টাল মার্জিন, ব্লু ইকোনমি, মেরিটাইম জোন, অভ্যন্তরীণ জলসীমা, বর্জ্য ফেলা, যুদ্ধজাহাজ, সামুদ্রিক দূষণ স্থাপন এবং সমুদ্র ট্রাইব্যুনালসহ একাধিক আধুনিক পরিভাষা যুক্ত করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল সমুদ্র সুরক্ষা জোরদার করা, সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং অপরাধের জন্য জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা।

সমুদ্র ট্রাইব্যুনালের প্রতিশ্রুতি

আইনের সবচেয়ে আলোচিত অংশ ছিল সমুদ্র ট্রাইব্যুনাল গঠন। বিশেষ আদালতগুলোতে বিচারের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল—

  • অবৈধ বর্জ্য ফেলা বা দূষণকারী পদার্থ নিঃসরণ,
  • সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন,
  • বাংলাদেশের সামুদ্রিক সীমানার মধ্যে সংঘটিত অন্যান্য অপরাধ।

আইনের ২৭ ধারা অনুযায়ী, দেশে একটি বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের সুযোগ রাখা হয়। এসব আদালতের বিচারক হবেন জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ, যাদের নিয়োগ করা হবে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে।

তবে বাস্তবে, চার বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সমুদ্র ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়নি।

জনসাধারণের প্রবেশাধিকারে জটিলতা

আইনের ৩০ ধারা অনুযায়ী সাধারণ নাগরিকরা সরাসরি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন না। কেবলমাত্র সরকারের অনুমোদিত ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ করলে মামলা শুরু করা যাবে। কিন্তু আইনটিতে ‘অনুমোদিত ব্যক্তি’ কারা এবং তাদের যোগ্যতা কী—তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই।

ফলে দুটি সমস্যা স্পষ্ট হয়ে ওঠে:
১. ন্যায়বিচারে সীমিত প্রবেশাধিকার: পরিবেশগত ক্ষতির শিকার ব্যক্তিরা নিজেরাই মামলা করতে পারছেন না।
২. বিশেষজ্ঞতার ঘাটতি: বিচারকদের সামুদ্রিক ও পরিবেশ আইন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

কঠোর শাস্তি, কার্যকারিতার অভাব

সংশোধিত আইনে শাস্তির বিধান শক্তিশালী করা হয়েছে। যেমন অবৈধভাবে দূষণ ছড়ানো বা সামুদ্রিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করার অপরাধে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড বা দুই কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কিন্তু কার্যকর ট্রাইব্যুনাল না থাকায় এসব কঠোর শাস্তি কাগজেই সীমাবদ্ধ। ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, আর সমুদ্র আইনের প্রয়োগ কার্যত অকার্যকর রয়ে গেছে।

এখন কী প্রয়োজন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনটি কার্যকর করতে হলে অবিলম্বে বিশেষায়িত সমুদ্র ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ নাগরিকদের সরাসরি মামলা করার অধিকার দিতে হবে। অনুমোদিত অভিযোগকারী ও বিচারক নির্বাচনের জন্য স্পষ্ট মানদণ্ড তৈরি করতে হবে এবং বিচারকদের সামুদ্রিক ও পরিবেশ আইন বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান “ব্লু ইকোনমি” ও সমৃদ্ধ সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শুধু আইনই যথেষ্ট নয়—প্রয়োজন কার্যকর, সহজপ্রাপ্য ও দক্ষ বিচারব্যবস্থা।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version