Home জাতীয় ‘৮ উপদেষ্টার ২০০ কোটি টাকার সীমাহীন দুর্নীতি’ – বিএনপি চেয়ারপার্সনের সচিব সাত্তার!!

‘৮ উপদেষ্টার ২০০ কোটি টাকার সীমাহীন দুর্নীতি’ – বিএনপি চেয়ারপার্সনের সচিব সাত্তার!!

0

রাজনৈতিক মহলে এবং প্রশাসনিক অঙ্গনে এক দফায় উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার কর্তৃক উঠে আসা ৮ জন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির গম্ভীর অভিযোগ। এই খবরটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে ব্যাপক সমালোচনা ও আলোচনা চলছে, যার ফলে এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই বিষয়টি কোথায় পৌঁছাবে এবং সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে?

গত বছরের ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এত গম্ভীর অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়নি এই পরিমাণ উপদেষ্টাকে। সাত্তার অভিযোগ করে বলেন, সরকারি পর্যায়ে আটজন উপদেষ্টা সীমাহীন দুর্নীতিতে লিপ্ত রয়েছেন এবং গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এ ব্যাপারে প্রমাণও রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এমনকি একজন উপদেষ্টার ব্যাংক হিসাব থেকে পাওয়া গেছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা, যার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এই দাবি প্রকাশ্যে আসার সাথে সাথেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ এক বিবৃতিতে অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন এবং অবাস্তব হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি অভিযোগকারীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি সত্যিই প্রমাণ থাকে তবে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সরবরাহ করতে হবে। অন্যদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ বি এম আব্দুস সাত্তার ব্যক্তিগত বক্তব্য দিয়েছেন এবং দলের সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

সাত্তার নিজে এখনও এই অভিযোগ প্রত্যাহার করেননি, যদিও শনিবার থেকে তার ফোন বন্ধ রাখা হচ্ছে এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশনও এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি, যা এই ঘটনার ভবিষ্যৎ অগ্রগতি নিয়ে জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিযোগের প্রমাণাদি সরবরাহ না করায় এই মামলা গুরুত্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ না দিলে ভবিষ্যতে এই ধরনের দাবিও অবাস্তব মনে হতে পারে এবং এর ফলে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি আরও বলেন, “জনগণের জানার অধিকার রয়েছে এবং তাই অভিযোগকারী কর্তব্যে থাকা উচিত সঠিক তথ্য যথাযথ সংস্থাকে প্রদান করা।”

অন্যদিকে, সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। অভিযোগকারী হিসেবে আব্দুস সাত্তারের উচিত এখন সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রমাণাদি উপস্থাপন করা।”

এই বিতর্কের পেছনে এ বি এম আব্দুস সাত্তারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিচয়ও আলোচনায় এসেছে। তিনি ছিলেন বিডিএস প্রশাসন ক্যাডারের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা, যিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুগ্ম সচিব থাকাকালীন তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের অধীনে তিনি পুনরায় সচিব পদে পদোন্নতি পান এবং প্রশাসনিক ক্লাবে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সাত্তার অভিযোগে যে উপদেষ্টাদের নাম এসেছে, তারা দেশের জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত। সাত্তার অভিযোগ করেছেন, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় অনভিজ্ঞ ও দুর্নীতিপরায়ণ উপদেষ্টাদের হাতে রয়েছে, যা দেশের জন্য এক গভীর উদ্বেগের বিষয়।

অন্যদিকে, প্রশাসন ক্যাডারের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এ ঘটনাকে শুধুমাত্র একাডেমিক আলোচনা বলে অভিহিত করেছে এবং নিজেদের সঙ্গে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে।

অবশেষে, এই বিতর্ক দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গতিপ্রকৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখন দেখার বিষয়, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন কতটা সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারবে।

তবে এ বিষয়ে অনেকেই একমত, প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ শুধু আলোচনা নয়, অবশেষে কাজের বিষয়। সময়ই বলে দেবে এই ঘটনার প্রকৃত ফলাফল কী হবে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version