Home ভূ-রাজনিতী ব্রিকস সদস্যপদে বাদ পড়ল বাংলাদেশ: কারণ ও বিশ্লেষণ

ব্রিকস সদস্যপদে বাদ পড়ল বাংলাদেশ: কারণ ও বিশ্লেষণ

ব্রিকস সদস্যপদে বাদ পড়ল বাংলাদেশ: কারণ ও বিশ্লেষণ

0

নানাবিধ জল্পনার পর ব্রিকসের সদস্যপদে যুক্ত হল নতুন ছয় দেশ, যার মধ্যে রয়েছেন সৌদি আরব ও ইরান। তবে আলোচনায় থাকা বাংলাদেশের নাম এবার নতুন সদস্য তালিকায় স্থান পায়নি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা প্ল্যাটফর্মে গরম আলোচনা চলছে। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করছেন কেন বাংলাদেশ বাদ পড়ল, যদিও প্রথমেই আশা তৈরি হয়েছিল।

বর্তমানে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে ব্রিকস গঠিত হলেও এর নেতৃত্ব প্রধানত চীনের হাতে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের প্রভাব কমানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্রিকসকে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করছে বেইজিং। ফলে জোটের দ্রুত সম্প্রসারণ চায় চীন। তবে ভারত—চীনের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধ রয়েছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত জোট সম্প্রসারণ নিয়ে সংযত পদক্ষেপ নিতে চায়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ত্রিমুখী ভূ-রাজনৈতিক খেলায় বাংলাদেশ ‘ফাঁদে’ পড়েছে।

ব্রিকসের ১৫তম সম্মেলনের আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছিল, নতুন সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের যোগদানে বাধা সৃষ্টি করেছে ব্রাজিল ও ভারত। ব্রাজিলের আপত্তি গঠনতান্ত্রিক জটিলতাকে কেন্দ্র করে হলেও, ভারতের বিরোধিতাকে রাজনৈতিক প্রভাবিত মনে করছেন অনেকেই। কারণ, ভারতের উদ্বেগ বাংলাদেশের চীনের দিকে ঝোঁক নেওয়া নিয়ে।

ঢাকা-নয়াদিল্লি-বেইজিংয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান প্রভাব প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে নিজের দলে টানার চেষ্টা করছে চীন ও ভারত। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রও দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের প্রভাব বাড়াতে বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী।

জাতীয় নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনের সময়ে এই ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, বাংলাদেশ যেকোনো জোটে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থনীতিকেই অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দিক বেশি প্রভাব ফেলেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চীন শেখ হাসিনার সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে, তবে তা একতরফা নয়; বেইজিং বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক রাখে। অন্যদিকে, ভারতের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিকভাবেই আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়া হয়।

জাতীয় নির্বাচনের বিষয়েও ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ভিন্ন, যা দিল্লির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। ভারত চায় ঢাকায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক এবং শেখ হাসিনা সরকারের অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের ও দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করে।

ব্রিকস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন ধরে রাখার ক্ষেত্রে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ নীতিতে ভারতের এবং চীনের মধ্যে একপক্ষ বেছে নেয়া বাংলাদেশে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ কারণেই ব্রিকসের নতুন সদস্য তালিকায় ঢাকার জায়গা হয়নি।

ব্রিকসে যোগদানের জন্য ঢাকা আনুষ্ঠানিক আবেদন করলেও, জোটের সিদ্ধান্তে সব সদস্যের ঐকমত্য জরুরি। বিশেষ দূত পাঠানো, চিঠিপত্র আদানপ্রদানসহ নানা কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, নতুন সদস্য নির্বাচনে কঠোর মানদণ্ড ছিল এবং ঐকমত্যের অভাব ছিল। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এগোচ্ছে, যা আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বোধগম্য।

সংক্ষেপে, চীন ব্রিকস সম্প্রসারণের মাধ্যমে মার্কিন প্রভাব সীমিত করতে চায়, তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও ভারতকে পশ্চিমাদের থেকে দূরে রাখতে চায়। অন্যদিকে, ভারতের লক্ষ্য বহুপাক্ষিক ভারসাম্য বজায় রাখা।

প্রথম ধাপে নতুন ছয় দেশ অন্তর্ভুক্ত হলেও ভবিষ্যতে আরও দেশ যোগ দিতে পারে। ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক হিসাব-নিকাশ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্রিকসে যোগ দিতে পারবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version