Home তথ্য প্রযুক্তি ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের নতুন পদ্ধতি – অস্ত্রোপচার বা কেমো ছাড়াই!!

ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের নতুন পদ্ধতি – অস্ত্রোপচার বা কেমো ছাড়াই!!

0

বিজ্ঞানীরা এমন এক যুগান্তকারী পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যা ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে পারে, অথচ এতে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি বা এমনকি তাপও ব্যবহার করতে হয় না। এর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় একটি বিশেষ মেডিকেল ডাই (রং) এবং ক্ষতিকারক নয় এমন নিকট-ইনফ্রারেড আলো, যা ক্যান্সার কোষকে ভেঙে ফেলে – কিন্তু আশপাশের সুস্থ কোষ অক্ষত থাকে।

গোপন অস্ত্র: সাধারণ ইমেজিং ডাই

এই আবিষ্কারের মূল চাবিকাঠি হলো অ্যামিনোসায়ানিন নামের একটি ডাই, যা হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যে শরীরের ভেতরের ছবি তোলার জন্য ব্যবহার করে। যেহেতু এই রাসায়নিকটি ইতিমধ্যে এফডিএ অনুমোদিত, তাই এটি মানুষের শরীরে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ এবং এর সুরক্ষার ইতিহাসও সুপরিচিত।

এটি কীভাবে কাজ করে

যখন চিকিৎসকরা অ্যামিনোসায়ানিনের ওপর নিকট-ইনফ্রারেড (NIR) আলো ফোকাস করেন, তখন এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে। ডাইয়ের অণুগুলো অত্যন্ত উচ্চ গতিতে কম্পন শুরু করে—প্রতি সেকেন্ডে প্রায় এক ট্রিলিয়ন বার। এই কম্পন কার্যত এক ধরনের ক্ষুদ্র জ্যাকহ্যামারের মতো কাজ করে।

ফলাফল? ক্যান্সার কোষের ঝিল্লি সরাসরি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। অথচ, যে কোষগুলো এই ডাই শোষণ করেনি, সেই সুস্থ কোষগুলো অক্ষত থাকে।

ল্যাব ও প্রাণীর পরীক্ষায় চমকপ্রদ ফলাফল

মানব মেলানোমা কোষের ল্যাব পরীক্ষায় এই পদ্ধতি ৯৯% ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করেছে। প্রাণীর উপর (বিশেষ করে ইঁদুরে) পরীক্ষায়ও একই কৌশল টিউমার ছোট করেছে বা অর্ধেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দিয়েছে।

গবেষকরা এই কম্পনশীল ডাই অণুগুলোকে ডাকনাম দিয়েছেন “মলিকুলার জ্যাকহ্যামার” – কারণ এগুলো সরাসরি ক্যান্সার কোষে ছিদ্র করতে পারে। কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের মতো যা রাসায়নিক বিক্রিয়া বা চরম তাপের ওপর নির্ভরশীল, তার বিপরীতে এই পদ্ধতি খাঁটি যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করে।

কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ

এই পদ্ধতির বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে:

  • অ আক্রমণাত্মক (Non-invasive): অস্ত্রোপচারের দরকার নেই।
  • কেমোথেরাপি-জাতীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই: এটি শরীরকে বিষাক্ত করে না, চুল পড়ে না, বমি হয় না বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
  • নির্ভুলতা (Precision): এটি শুধুমাত্র ক্যান্সার কোষকে লক্ষ্য করে, সুস্থ টিস্যুকে অক্ষত রাখে।
  • ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: NIR আলো কয়েক সেন্টিমিটার গভীর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা শুধু পৃষ্ঠের টিউমার নয়, ভেতরের গভীর টিউমার চিকিৎসাতেও সাহায্য করতে পারে।

ক্যান্সার চিকিৎসায় এক বিপ্লবী ধারণা

প্রচলিত ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রায়ই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দীর্ঘ পুনরুদ্ধারের সময় এবং পুনরায় রোগ ফিরে আসার ঝুঁকি দেখা দেয়। এই নতুন পদ্ধতি ভিন্ন, কারণ এটি রাসায়নিক নয়, বরং পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে ক্যান্সার ধ্বংস করে। ক্যান্সার কোষ ওষুধ প্রতিরোধী হতে পারে, কিন্তু তাদের জন্য আণবিক পর্যায়ে শারীরিকভাবে ছিন্নভিন্ন হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে

এটি মনে রাখা জরুরি যে এই আবিষ্কারটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত গবেষণা সীমাবদ্ধ ছিল কোষ সংস্কৃতি ও ল্যাবের ইঁদুর পর্যন্ত। মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহারের আগে গবেষকদের আরও সুরক্ষা পরীক্ষা ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে হবে। এছাড়া, শরীরের সব ধরনের টিউমারে অ্যামিনোসায়ানিন কীভাবে পৌঁছানো যায়, সেটাও বের করতে হবে।

তবুও বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী। গবেষক দল বিশ্বাস করে যে ভবিষ্যতে এটি কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের মানদণ্ড চিকিৎসায় পরিণত হতে পারে। সফল হলে এটি রোগীদের জন্য আরও নিরাপদ, দ্রুত এবং আরামদায়ক চিকিৎসার পথ খুলে দিতে পারে।

ক্যান্সার চিকিৎসার ভবিষ্যৎ?

ভাবুন এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতির কথা, যেখানে রোগী কেবল নিরাপদ এক ধরনের ডাইয়ের ইনজেকশন নেবে এবং তারপর কয়েক মিনিটের জন্য নিকট-ইনফ্রারেড আলোয় বিশ্রাম নেবে—কোনো ছুরি নয়, কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক নয়, সপ্তাহের পর সপ্তাহ সুস্থ হওয়ার অপেক্ষাও নয়। এটাই এই “মলিকুলার জ্যাকহ্যামার” প্রযুক্তির স্বপ্ন।

মানুষের ওপর চলমান গবেষণা যদি এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করে, তবে এটি কয়েক দশকের মধ্যে ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে বড় বিপ্লবগুলোর একটি হয়ে উঠতে পারে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version