Home লাইফ স্টাইল বিনোদন সিটি গ্রুপ–প্রথম আলোর জমকালো ক্রীড়া উৎসবে রিতুপর্ণা চাকমার দাপট: সেরা খেলোয়াড় ও...

সিটি গ্রুপ–প্রথম আলোর জমকালো ক্রীড়া উৎসবে রিতুপর্ণা চাকমার দাপট: সেরা খেলোয়াড় ও পাঠক পছন্দ পুরস্কার!!

0

সিটি গ্রুপ–প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার ২০২৪ হয়ে উঠেছিল এক অবিস্মরণীয় ক্রীড়া উৎসবের সন্ধ্যা। কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন একজনই—বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের তারকা রিতুপর্ণা চাকমা। মাত্র ২১ বছর বয়সেই ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের ওএসিস ফাংশন হলে তিনি রচনা করলেন নতুন ইতিহাস—একই আসরে বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদপাঠক পছন্দের পুরস্কার দুটোই জিতে নিলেন।

তার এই সাফল্য কেবল ব্যক্তিগত মাইলফলকই নয়—এটি ছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জন্য গর্বের মুহূর্ত। বিচারকদের সিদ্ধান্ত ও সাধারণ পাঠকের ভোট—উভয় ক্ষেত্রেই সেরা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এর মাধ্যমে ২০২২ সালে সাবিনা খাতুনের পর দ্বিতীয় নারী ফুটবলার হিসেবে বর্ষসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন রিতুপর্ণা।

প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোনয়ন তালিকায় রিতুপর্ণা পিছনে ফেলেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদকে, যারা ২০২৪ সালে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য রানার-আপ হয়েছেন। পাঠক পছন্দের পুরস্কারে তিনি হারিয়েছেন তিন ক্রিকেটার—তাসকিন, মিরাজ, জাকির আলি—এবং দুই ফুটবলার—সাবিনা খাতুন ও শেখ মোরশালিনকে। দুই ধাপের ভোটে (প্রিন্ট ও অনলাইনে) সবার ওপরে থেকে এই সম্মান অর্জন করেন তিনি।

যদিও রিতুপর্ণার দ্বৈত জয় ছিল সন্ধ্যার প্রধান আকর্ষণ, তবে অনুষ্ঠানটি সমানভাবে ছিল অতীতের কিংবদন্তি ও নতুন প্রতিভাদের সম্মান জানানোর মঞ্চ। ১৯৮০-এর দশকে টানা সাত বছর বাংলাদেশের দ্রুততম দৌড়বিদের খেতাব ধরে রাখা কিংবদন্তি অ্যাথলেট মোশাররফ হোসেন শামীম পেলেন আজীবন সম্মাননা পুরস্কার। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান তাকে পরিয়ে দেন সম্মাননা শাল, আর সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জাফর উদ্দিন সিদ্দিকী হাতে তুলে দেন ক্রেস্ট। আবেগঘন কণ্ঠে শামীম বলেন, জীবনের সন্ধিক্ষণে সম্মান পাওয়া আমার জন্য এক বিরাট গৌরব।

এবারের বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রীড়াবিদ হয়েছেন তরুণ দাবাড়ু মনন রেজা। আর সেরা নারী ক্রীড়াবিদ হয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের স্ট্রাইকার তাহুরা খাতুন। ভুটানের নারী লিগ থেকে উড়ে এসে পুরস্কার গ্রহণের সময় তিনি আহ্বান জানান—বাংলাদেশের বড় ক্লাবগুলো যেন নিজেদের নারী দল গঠন করে, যাতে খেলোয়াড়দের বিদেশে যেতে না হয়।

এই সন্ধ্যা শুধু পুরস্কারেই সীমাবদ্ধ ছিল না—ছিল গল্প, স্মৃতি আর সুরের মিলনমেলা। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দাবা গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে গড়ে ওঠা অসংখ্য ক্রীড়া প্রতিভার কথা বলেন, যারা নানা কারণে পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারেননি। পরে তিনি সবাইকে চমকে দিয়ে গেয়ে ওঠেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের অমর গান আমায় প্রশ্ন করে নীল দুর্বতার—যেখানে তাকে সঙ্গ দেন সাবেক ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম, শুটার সাবরিনা সুলতানা ও আসিফ হোসেন খান।

সিটি গ্রুপের জাফর উদ্দিন সিদ্দিকী জানান, শৈশবের ক্রীড়া নায়কদের সরাসরি দেখতে পেয়ে তার ব্যক্তিগত আনন্দ কতটা গভীর। অন্যদিকে মতিউর রহমান বলেন, সত্য বলার কারণে প্রথম আলো নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও খেলোয়াড় ও পাঠকের সমর্থন তাদের এগিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়।

এবারের মর্যাদাপূর্ণ বিচারক প্যানেলে ছিলেন সাবেক ফুটবলার আশরাফউদ্দিন চুনু (সভাপতি), সাবেক সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা, সাবেক ক্রিকেটার আথার আলি খান, সাবেক শুটার শারমিন আক্তার ও ক্রীড়া সাংবাদিক দুলাল মাহমুদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্মান্য ঘোষ ও শ্রাবণ্য তৌহিদা। প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্রর উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই আয়োজনে সমাপ্তি টানেন ক্রীড়া সম্পাদক তারেক মাহমুদ।

রিতুপর্ণা চাকমার জন্য এই সন্ধ্যা শুধু দুটি পুরস্কারের গল্প নয়—এটি তার পথচলার এক উজ্জ্বল অধ্যায় এবং প্রমাণ যে, সুযোগ ও প্রতিভা একসঙ্গে হলে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ আকাশ ছুঁতে পারে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version