সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর আজ চরম সংকটে। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অবৈধ পাথর উত্তোলন এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএনপি ও যুবদল নেতাদের নেতৃত্বে, সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও এই লুটপাটে জড়িত। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে ভেসে আসা পাথর খোলাখুলিভাবে লুট হচ্ছে, এমনকি ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকাও বাদ পড়ছে না।
পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, এভাবে চলতে থাকলে সাদা পাথর একদিন সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাবে, হারাবে পর্যটক আকর্ষণ এবং সরকারের রাজস্ব আয়ের বড় উৎস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও দেখা গেছে—কোদাল, শাবল ও টুকরি হাতে হাজারো শ্রমিক দিনরাত মাটি খুঁড়ে পাথর তুলছে, বারকি নৌকায় তা নিয়ে মিলমালিকদের কাছে বিক্রি করছে, পরে ভেঙে দেশের নানা স্থানে পাঠানো হচ্ছে।
একসময় নৌকাপ্রতি ১,৫০০–২,০০০ টাকা চাঁদা তোলা হলেও সম্প্রতি পদ্ধতি বদলেছে। এখন চাঁদা না দিয়ে সিন্ডিকেটের নির্ধারিত দামে (প্রতি নৌকা সর্বোচ্চ ১,৫০০ টাকা) পাথর বিক্রি করতেই হবে। স্থানীয়দের ধারণা, শুধু গত এক বছরে ২–৩ হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে।

২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে জমে থাকা বিশাল পাথরের স্তূপ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার ও ইউএনও আবুল লাইছ। পরবর্তীতে মহাপরিকল্পনাও করা হয়েছিল, তবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় আজ তা ঝুঁকির মুখে।
বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিমের দাবি, গত ১৫ বছরের তুলনায় গত এক বছরে কয়েকগুণ বেশি লুটপাট হয়েছে এবং এখানে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কেউ নেই—সবাই সংঘবদ্ধভাবে লুটপাট করছে। তার মতে, প্রশাসনের ব্যর্থতাই এই অবস্থার মূল কারণ।

বিএনপি ও যুবদলের নেতারা তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, যারা লুট করছে তারা অধিকাংশই সিলেটের বাইরের মানুষ এবং দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও তারা জানান।
পুলিশ ও জেলা প্রশাসন জানায়, নিয়মিত টাস্কফোর্স অভিযান চালানো হলেও জনবল সংকটে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনবল বৃদ্ধির উদ্যোগ বিবেচনায় রয়েছে।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এই স্থান আজ লুটপাটের কবলে। পরিবেশকর্মীদের ভাষায়—যদি ধ্বংসের দৃশ্য দেখতে চান, তবে সাদা পাথরে চলে আসুন।