বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২১, ২০২৫
- বিজ্ঞাপন-
Good News Global
Homeখোলা-জানালাচাঁদের বুড়ির জাদুর রেলগাড়ি
Ads Space

চাঁদের বুড়ির জাদুর রেলগাড়ি

চাঁদের বুড়ির জাদুর রেলগাড়ি

১. রহস্যময় রাত

এক রাতে রায়ান আর মিমি দাদুর কাছ থেকে শুনছিল গল্প।

দাদু: “চাঁদের বুড়ি নাকি রাতে এক জাদুর রেলগাড়ি চালিয়ে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায়। সে ভালো বাচ্চাদের পুরস্কার দেয় আর দুষ্টুদের শেখায় ভালো আচরণ।”

রায়ান (হেসে): “আরে দাদু, এসব তো মিথ্যে গল্প!”

মিমি: “না না, আমি বিশ্বাস করি! আমি তো চাঁদের বুড়ির সঙ্গে দেখা করতে চাই!”

রাতে খাওয়ার পর ভাইবোন দু’জন ছাদে গিয়েছিল চাঁদ দেখতে। হঠাৎ করেই চারপাশে ঝিকিমিকি আলো জ্বলে উঠলো।

রায়ান: “ও মাই গড! এই আলোগুলো কোথা থেকে এলো?”

মিমি (উল্লাসে): “দেখো! ট্রেন আসছে! চাঁদের বুড়ির ট্রেন!”

একটা রুপালি রেলগাড়ি এসে থামলো ছাদের কিনারায়। দরজা খুলে ভেতর থেকে এক বৃদ্ধা বেরিয়ে এলেন। তাঁর লম্বা সাদা চুল, হাতে একটা সোনালি লাঠি।

চাঁদের বুড়ি: “রায়ান আর মিমি! আমি জানতাম তোমরা আমাকে ডাকবে। চলো, আমার জাদুর রেলগাড়িতে!”

রায়ান: “এটা কি স্বপ্ন?”

চাঁদের বুড়ি (হেসে): “স্বপ্ন আর বাস্তব মাঝে জাদু হলো সেতু। চলো, আজ একটা বড় অভিযান শুরু করি।”

২. রেলগাড়ির ভিতরে

ভেতরে ঢুকে তারা তাকিয়ে গেলো অবাক হয়ে। দেয়ালে ঝুলছে নক্ষত্র, ছাদের উপর ঘুরছে চাঁদ, চারদিকে রঙিন আলো। সেখানে একজন রোবট দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বলল:

টিকটিক: “হ্যালো! আমি টিকটিক। আমি এই ট্রেনের দুষ্টু রোবট, কিন্তু খুবই চতুর।”

মিমি: “তুমি কি কথা বলো?”

টিকটিক: “আমি তো সবই পারি! গান গাই, র‍্যাপ করি, আর মাঝে মাঝে জাদুও!”

ট্রেনের চালকের কেবিন থেকে একজন মোটা, হাসিখুশি ভদ্রলোক বের হয়ে এলেন।

মিস্টার ঝংকার: “আমি মিস্টার ঝংকার! এই রেলগাড়ির ড্রাইভার। গন্তব্য: তারাদের শহর, কল্পনার দেশ আর দুষ্টু রোবটদের জেলখানা!”

রায়ান: “এই রেলগাড়ি কি উড়তে পারে?”

চাঁদের বুড়ি: “অবশ্যই। আমরা আজ রাতেই তোমাদের নিয়ে যাব তিনটি জাদুর জগতে। যেখান থেকে তোমরা ফিরে আসবে অনেক বুদ্ধি আর সাহস নিয়ে।”

৩. প্রথম গন্তব্য: কল্পনার শহর

ট্রেন উড়ে গেল আকাশে। তারা এসে পৌঁছালো কল্পনার শহরে।

মিমি (চোখ বড় করে): “ওয়াও! গাছগুলো চকলেটের মতো! আকাশে মাছ উড়ছে!”

একটা বাচ্চা ডাইনোসর দৌড়ে এসে বলল:

ডাইনো: “তোমরা কি কল্পনার নতুন বন্ধু?”

রায়ান: “তুমি তো সত্যি! এটা কী করে সম্ভব?”

চাঁদের বুড়ি: “এই শহরে সব কিছু কল্পনায় তৈরি। তুমি যা ভাববে, তাই হবে।”

রায়ান কল্পনা করল একটা রঙিন রকেট। সঙ্গে সঙ্গেই তৈরি হয়ে গেল।

রায়ান: “ওয়াও! আমি তো নিজেই বিজ্ঞানী হয়ে গেছি!”

মিমি: “আমি একটা পনিরে তৈরি দোলনা চেয়েছিলাম!”

সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে পনিরের দোলনা নেমে এল।

চাঁদের বুড়ি: “শোনো বাচ্চারা, কল্পনা মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি। যেটা কল্পনা করতে পারো, সেটাই একদিন বাস্তব হয়। তাই কল্পনা করো বড় করে!”

৪. দ্বিতীয় গন্তব্য: সাহসের জঙ্গল

রেলগাড়ি এবার পৌঁছালো সাহসের জঙ্গলে। সেখানে গর্জন করে উঠল এক বিশাল সিংহ।

মিমি (কাঁপতে কাঁপতে): “আমি ভয় পাচ্ছি!”

টিকটিক (হাসতে হাসতে): “ভয় পেলে তো হারলে! সাহস দেখাও!”

রায়ান: “মিমি, আমরা একসাথে গেলে সাহস বাড়ে। চলো!”

তারা সিংহের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু সিংহ হঠাৎ নরম গলায় বলল:

সিংহ: “তোমরা ভয় না পেলে আমি তোমাদের বন্ধু হব। সাহসের পরীক্ষা তোমরা পাস করেছো।”

চাঁদের বুড়ি: “এই জঙ্গল শিখায়—ভয়কে জয় করলেই ভিতরে জন্ম নেয় সাহস। জীবনে অনেক ভয় আসবে, কিন্তু সেগুলোর মুখোমুখি হতে শিখলে, তবেই মানুষ বড় হয়।”

৫. তৃতীয় গন্তব্য: দুষ্টু রোবটদের কারখানা

এবার ট্রেন এসে থামলো এক ধোঁয়াটে জায়গায়। সেখানে নানা রকম দুষ্টু রোবট ছুটোছুটি করছে, ভয় দেখাচ্ছে একে অন্যকে।

টিকটিক (চুপচাপ): “আমি ওদের একজন ছিলাম একসময়। তবে আমি বদলেছি।”

মিমি: “ওরা এত দুষ্টু কেন?”

চাঁদের বুড়ি: “ওদের শেখানো হয়নি ভালো ব্যবহার। তোমাদের শেখাতে হবে।”

রায়ান সামনে গিয়ে বলল:

রায়ান: “শোনো সবাই! দুষ্টুমি করলে কেউ তোমাদের ভালোবাসবে না। আমরা যদি একে অপরকে সাহায্য করি, তাহলে সবাই খুশি থাকবে।”

এক রোবট: “কেউ কখনও আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি! তোমরা কি আমাদের বন্ধু হবে?”

মিমি (হেসে): “অবশ্যই! বন্ধুত্ব হলো ভালো আচরণের শুরু।”

চাঁদের বুড়ি একটা জাদুর কাঠি ঘুরিয়ে সব রোবটকে দিল নতুন মন—যেখানে জায়গা হলো ভালোবাসা, সহানুভূতি আর বন্ধুত্বের।

৬. ফিরে আসা

রাত শেষের দিকে। রেলগাড়ি ফিরছে পৃথিবীর দিকে।

মিস্টার ঝংকার: “আজকের রাতের অভিযান শেষ। এখন তোমাদের ঘরে ফিরতে হবে।”

টিকটিক: “তোমরা আসলেই বীর! আমি গর্বিত।”

চাঁদের বুড়ি: “মনে রেখো—কল্পনা করো বড় করে, ভয়কে জয় করো সাহসে আর ভালো আচরণ করো সবসময়। তাহলেই তোমরা হয়ে উঠবে পৃথিবীর সেরা মানুষ।”

রায়ান আর মিমি চোখ বন্ধ করল। যখন তারা চোখ খুলল, তখন তারা আবার নিজের ঘরে—সকালের আলো ঢুকছে জানালা দিয়ে।

মিমি: “রায়ান, ওটা কি স্বপ্ন ছিল?”

রায়ান (মুচকি হেসে): “হয়তো। কিন্তু তুমি দেখো—আমার আঁকা রকেটটা টেবিলে কেন?”

দেখে তারা চমকে উঠল—টেবিলে ছিল কল্পনার সেই রকেটের ছোট্ট একটা মডেল।

শেষাংশ

সেই রাতের পর থেকে রায়ান আর মিমি অনেক বদলে যায়। রায়ান হতে চায় বিজ্ঞানী, আর মিমি হতে চায় কল্পনাশিল্পী। তারা বন্ধুদের শেখায় কীভাবে কল্পনায় ডানা মেলে, ভয়কে জয় করা যায় আর কীভাবে একজন ভালো মানুষ হওয়া যায়।

চাঁদের বুড়ি তাদের জানিয়ে গেছেন—ভালোবাসা আর সাহস দিয়ে পৃথিবী বদলে ফেলা যায়। আর সেই শিক্ষা নিয়েই ছোট দুই ভাইবোন বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো।


শেষ

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন-
Codesk Ads

Most Popular

- বিজ্ঞাপন-
MK Groceries Ads

Recent Comments

- বিজ্ঞাপন-
Jetsbrick Ads