আজ বিশ্ব প্রী-ডায়াবেটিস দিবস। প্রতি বছর ১৪ আগস্ট এই দিনটি পালিত হয় প্রাথমিকভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও প্রী-ডায়াবেটিস সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করে জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে পারলে মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে প্রী-ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ রিভার্স করা যায়।
কেন ১৪ আগস্ট?
বিশ্ব প্রী-ডায়াবেটিস দিবস ২০২১ সালে প্রথম চালু হয় দক্ষিণ এশিয়া ফেডারেশন অফ এন্ডোক্রাইন সোসাইটিজ (SAFES)-এর উদ্যোগে। ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের ঠিক ৯০ দিন আগে এই তারিখ বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক যুক্তি—৯০ দিনের মধ্যে খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়।
প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বিশ্বজুড়ে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭২০ মিলিয়ন মানুষ প্রী-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যা ২০৪৫ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—সঠিক সময়ে পদক্ষেপ না নিলে প্রী-ডায়াবেটিস আক্রান্তদের ৫০% এর বেশি ১০ বছরের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে রূপান্তরিত হতে পারেন।
বাংলাদেশেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। নগরায়ণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কম শারীরিক পরিশ্রম ও স্থূলতা বৃদ্ধির কারণে দেশে প্রী-ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

প্রাথমিক লক্ষণ ও ঝুঁকি
প্রী-ডায়াবেটিস সাধারণত লক্ষণবিহীন থাকে, তবে অতিরিক্ত ক্লান্তি, ওজন বেড়ে যাওয়া, বেশি ক্ষুধা ও তৃষ্ণা, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। ঝুঁকির মধ্যে আছেন—
- ৪৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি
- পরিবারে ডায়াবেটিস ইতিহাস রয়েছে এমন ব্যক্তি
- স্থূল বা অতিরিক্ত ওজনধারী মানুষ
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকা নারী
৯০ দিনের চ্যালেঞ্জ: রিভার্স প্রোগ্রাম
চিকিৎসকরা বলছেন, লাইফস্টাইল মডিফিকেশনই প্রী-ডায়াবেটিস মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
- খাদ্যাভ্যাস: পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট ও অতিরিক্ত চিনি বাদ দিয়ে শাকসবজি, ফল, ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া।
- শারীরিক ব্যায়াম: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হাঁটা বা শারীরিক অনুশীলন।
- ওজন কমানো: শরীরের মোট ওজনের ৫-১০% কমানো।
- নিয়মিত পরীক্ষা: বছরে অন্তত একবার রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা।
সরকারি ও সামাজিক উদ্যোগের প্রয়োজন
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (BADAS) মনে করে, শুধু ব্যক্তি পর্যায়ের সচেতনতা যথেষ্ট নয়—সরকারি পর্যায়ে বিনামূল্যে প্রী-ডায়াবেটিস স্ক্রিনিং, স্কুল ও কর্মস্থলে স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম, এবং গণমাধ্যমে প্রচার অভিযান বাড়াতে হবে।
উপসংহার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রী-ডায়াবেটিস একটি সতর্কবার্তা—যা উপেক্ষা করলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তবে সময়মতো শনাক্তকরণ ও জীবনধারার পরিবর্তন এনে টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আজকের এই দিনে, ‘৯০ দিনের প্রতিশ্রুতি’ গ্রহণ করলেই হয়তো আগামী ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসে আমরা আরও সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে পারব।