বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষণা করেছে যে, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। খসড়া তালিকার ওপর দাবি ও আপত্তি জানাতে পারবেন ভোটার ও সংশ্লিষ্টরা ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর আবেদনগুলো নিষ্পত্তির জন্য সর্বশেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ অক্টোবর। সবশেষে ২০ অক্টোবর প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র তালিকা।
এই প্রক্রিয়া অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি সুসংহত ও স্বচ্ছ ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় ইসি।
ইসির বিজ্ঞপ্তি ও নির্দেশনা
বুধবার (২০ আগস্ট) নির্বাচন কমিশনের উপসচিব মো. মাহবুব আলম শাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ কমিশনের অনুমোদন পেয়েছে এবং এটি গত ২৬ জুন বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (Representation of the People Order – RPO), ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৮ (১) ও (২) অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের তালিকা নির্বাচনের কমপক্ষে ২৫ দিন আগে গেজেটে প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক। তাই নির্বাচনের আগে ধাপে ধাপে খসড়া তালিকা প্রকাশ, দাবি-আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

কেন খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়?
খসড়া ভোটকেন্দ্র তালিকা প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য হলো ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রক্রিয়ার অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া। তালিকায় কোনো অনিয়ম, ভুল বা অসুবিধা থাকলে সংশোধনের সুযোগ থাকে।
দাবি-আপত্তি গ্রহণের মাধ্যমে:
- স্থানীয় জনগণের মতামত সংগ্রহ করা যায়
- সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব বা বিতর্ক কমে
- ভোটকেন্দ্রের সুষ্ঠু অবস্থান ও প্রবেশযোগ্যতা নিশ্চিত হয়
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে আরও গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে চায়।
নির্দিষ্ট সময়সূচি এক নজরে
🔹 ১০ সেপ্টেম্বর – খসড়া ভোটকেন্দ্র তালিকা প্রকাশ
🔹 ২৫ সেপ্টেম্বর – দাবি ও আপত্তি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ
🔹 ১২ অক্টোবর – সব দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ দিন
🔹 ২০ অক্টোবর – চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্র তালিকা প্রকাশ
নীতিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম
নির্বাচন কমিশন জানায়, “জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫” এর আলোকে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ নির্ধারণ করা হবে।
এই নীতিমালায় কয়েকটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে—
- ভৌগোলিক অবস্থান: ভোটারদের সহজে পৌঁছানো যায় এমন স্থানে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ
- নিরাপত্তা: আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করা
- সুবিধা ও প্রবেশযোগ্যতা: নারী, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য উপযোগী অবকাঠামো রাখা
- ভোটকক্ষের সংখ্যা: ভোটার সংখ্যা ও এলাকা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ভোটকক্ষ তৈরি
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ভোটকেন্দ্র তালিকা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে, নির্ধারিত তারিখের মধ্যে খসড়া ভোটকেন্দ্র ও সম্ভাব্য চূড়ান্ত তথ্য (সফটকপিসহ) ইসির সহায়তা শাখায় জমা দিতে হবে।
এর মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্তকরণে কোনো ধাপ বাদ না পড়ে এবং প্রতিটি অঞ্চলের তথ্য যথাযথভাবে সংগ্রহ হয়।
রাজনৈতিক গুরুত্ব
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যেই মাঠে সক্রিয়। ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ ও চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ—
- ভোটকেন্দ্রের অবস্থান প্রার্থীদের প্রচারণার কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখে
- ভোটারদের জন্য সহজলভ্য কেন্দ্র নির্বাচনী অংশগ্রহণ বাড়ায়
- বিতর্কিত বা দূরবর্তী কেন্দ্র নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে
তাই রাজনৈতিক দলগুলো খসড়া তালিকা প্রকাশের পর মনোযোগ সহকারে তা পর্যবেক্ষণ করবে এবং প্রয়োজন হলে দাবি-আপত্তি জানাবে।

নির্বাচনের পথে আরেক ধাপ
ভোটকেন্দ্র তালিকা প্রকাশ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অন্যতম প্রধান ধাপ। এর মাধ্যমে ভোটাররা আগেভাগেই নিজেদের কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে পারবেন, এবং সংশোধনের সুযোগও পাবেন।
স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই তালিকা চূড়ান্ত হলে, নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা বাড়বে এবং নির্বাচনী পরিবেশ হবে আরও অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক।
উপসংহার
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (Election Commission Bangladesh) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে। খসড়া তালিকা প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্তকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ ভোটারদের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখছে।
১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে এই প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক দল, ভোটার এবং স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে এটি হবে স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।