জুলাই গণ–অভ্যুত্থান দিবসে ঘোষিত জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে বিএনপিকে রাজনৈতিক চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। যদিও সনদ ঘোষণার পর সরকার ও বিএনপির প্রতি কড়া প্রতিক্রিয়া দেখায়নি দলটি, তবুও তারা এ বিষয়ে ছাড় দিতে রাজি নয় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।
এনসিপির শীর্ষ পাঁচ নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও আইনি ভিত্তি নিশ্চিত হওয়ার পরই তারা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দেবেন। দলটির মতে, সরকার ইতিমধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচন তারিখসহ বেশ কিছু বিষয়ে বিএনপির চাহিদাকেই প্রাধান্য দিয়েছে। এবার সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যাতে বিএনপি বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সেজন্য রাজনৈতিক চাপ তৈরি করা প্রয়োজন।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বড় কোনো প্রতিবাদ না করে এনসিপি একধরনের কৌশলগত ‘ছাড়’ দিয়েছে, যা বিএনপিকে বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, সংসদের উচ্চকক্ষে ১০০ আসন পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে পূরণের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও বিএনপিসহ কয়েকটি দলের এতে আপত্তি আছে, এনসিপি মনে করছে এই পরিবর্তন দেশে ন্যূনতম রাজনৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “প্রতিটি দল নির্বাচনের আগে একে অপরকে চাপে রাখে—এটা স্বাভাবিক। ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে দলের কৌশল বদলে যায়।”
এনসিপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলেও বিএনপি কেবল নির্বাচনমুখী রাজনীতিতেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। জুলাই মাসে সারা দেশে পদযাত্রার মাধ্যমে সমর্থন যাচাই শেষে এনসিপি এখন দুই শতাধিক উপজেলায় বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকার এক অনুষ্ঠানে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি সুরাহা না হলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কোনো অর্থ নেই।” একই অনুষ্ঠানে দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই)-এর তীব্র সমালোচনা করে প্রয়োজন হলে প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত করার দাবিও তোলেন।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব প্রথম আলোকে বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা নির্বাচন নিয়ে ভাবব।”