বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার আসন্ন ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম বড় উদ্যোগ হলো দেশের সকল ভোটকেন্দ্রে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের জন্য অন্তত ৪০,০০০ বডি ক্যামেরা (যাকে সাধারণত বডিক্যাম বলা হয়) কেনার পরিকল্পনা।
শনিবার ঢাকার যমুনা স্টেট গেস্টহাউসে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গৃহ উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং বিশেষ সহকারী খোদা বকস চৌধুরী ও ফয়েজ তায়্যাব আহমেদসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ সহকারী ফয়েজ তায়্যাব আহমেদ জানান, সরকার ৪০,০০০ বডিক্যামের ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কাজ করছে। এই ডিভাইসগুলো নির্বাচন দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও কনস্টেবলদের বুকে ধারণ করা হবে। বডিক্যামগুলো বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ বা অস্থির ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা অনেকগুণ বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আহমেদ বলেন, সরকার অক্টোবরের মধ্যে বডিক্যামগুলো প্রস্তুত করতে চায় যাতে পুলিশ কর্মকর্তাদের কার্যকরভাবে ডিভাইসগুলো ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার যথেষ্ট সময় থাকে। প্রশিক্ষণে বডিক্যামের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি শেখানো হবে, যার মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যা নির্বাচন সম্পর্কিত সংঘাত বা অনিয়ম পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধে সহায়ক হবে।
ক্যামেরা সরবরাহের জন্য বাংলাদেশ জার্মানি, চীন ও থাইল্যান্ডের কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করেছে। সরকার ক্রয় প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং যেকোনো বিলম্ব রোধে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস ভোটকেন্দ্রে সর্বাত্মক নিরাপত্তা দেওয়ার গুরুত্ব জোর দিয়ে বলেন, “যত খরচই হোক, প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি কর্মকর্তাদের বডিক্যামের কেনাকাটা দ্রুত সম্পন্ন করার এবং সেগুলো ব্যবহারের জন্য হাজার হাজার পুলিশ কর্মকর্তাকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে মুক্ত, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হিসেবে গড়ে তোলা।”
শারীরিক নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি সরকার একটি বিশেষ নির্বাচন অ্যাপ চালুরও প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা ভোটারদের তথ্য ও যোগাযোগের জন্য হবে। এই পরিকল্পনার ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টার টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী।
এই অ্যাপে নির্বাচনের বিস্তারিত তথ্য, প্রার্থীদের প্রোফাইল, ভোটকেন্দ্র থেকে আপডেট এবং ভোটারদের অভিযোগ জানানো বা সমস্যার প্রতিবেদন দেওয়ার সুবিধা থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা কর্মকর্তাদের দ্রুত এই অ্যাপটি চালু করতে এবং ব্যবহার বান্ধব করার নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ বাংলাদেশে এক শতকোটি’র বেশি নিবন্ধিত ভোটার রয়েছে। এই অ্যাপ ভোটারদের জন্য সময়োপযোগী ও সঠিক তথ্য পেতে সহজ করে দেবে।
উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি ও আধুনিক যোগাযোগ সরঞ্জামের সমন্বয়ে অস্থায়ী সরকার একটি নিরাপদ ও স্বচ্ছ ভোট পরিবেশ গড়ার আশায় রয়েছে। বডিক্যামগুলো পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এবং ঘটনাগুলো রিয়েলটাইমে নথিভুক্ত করতে সাহায্য করবে, যা অসদাচরণ বা সহিংসতা রোধ করতে সক্ষম।
অপরদিকে, নির্বাচন অ্যাপ ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পাওয়ার সুযোগ এবং মতামত জানাতে সাহায্য করবে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস গড়ে তুলবে।
ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের সময় এই নতুন পদক্ষেপগুলো কতটা কার্যকর হবে, তা সবার নজর থাকবে।