বাংলাদেশে ‘ঘুষ’ বা দুর্নীতি একটি গভীরভাবে নোঙরানো সমস্যা, যা শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়নেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুষের অভ্যাস দিন দিন বেড়ে চলেছে, যা দেশের সামাজিক ন্যায় ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বাংলাদেশের ঘুষ সংস্কৃতির বর্তমান অবস্থা
দেশের প্রায় সব স্তরে ঘুষের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় — শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যখাত, প্রশাসনিক অফিস থেকে বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ থেকে রাজনীতিবিদদের পর্যায় পর্যন্ত। সাধারণ মানুষের জন্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ দেওয়া প্রায় একটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। যেমন:
- সরকারি দপ্তরে নথিপত্র তৈরির জন্য অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া,
- চাকরির পরীক্ষায় বা নিয়োগে অবৈধ সুবিধা নেয়া,
- মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিচারকদের কাছে ঘুষ দেওয়া,
- স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবে অর্থ দেওয়া।
ঘুষ সংস্কৃতির কারণ
বাংলাদেশে ঘুষ সংস্কৃতির পেছনে রয়েছে নানা কারণ:
- সরকারি কর্মচারীদের কম বেতন ও দুর্বল তদারকি,
- দুর্নীতিবিরোধী আইন ও কার্যক্রমে অনভিপ্রেত দুর্বলতা,
- রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার,
- দুর্বল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও অসচ্ছলতা,
- সাধারণ মানুষের মধ্যে ন্যায্য সেবা পাওয়ার ওপর অবিশ্বাস।
ঘুষের প্রভাব
ঘুষের কারণে বাংলাদেশের সমাজে দেখা যাচ্ছে:
- সেবা গ্রহণে বৈষম্য ও অবিচার,
- শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের মানহীনতা,
- সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যর্থতা,
- বৈধ ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব,
- সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ বৃদ্ধি।
ঘুষ প্রতিরোধে বাংলাদেশের উদ্যোগ
বাংলাদেশ সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন ঘুষ ও দুর্নীতি মোকাবেলায় কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যক্রম জোরদার করা,
- সরকারি পরিষেবায় ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি,
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও কঠোর নজরদারি,
- নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও ঘুষবিরোধী প্রচারণা চালানো।
প্রয়োজন আরও দৃঢ় পদক্ষেপ
তবে এই সমস্যার চরম মাত্রা এবং ঘুষের বিস্তার রোধে আরো কঠোর ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে:
- সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকারিক বেতন বৃদ্ধি ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা,
- দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত ও দণ্ডবিধি কার্যকর করা,
- সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা,
- শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা ও সৎাচারের শিক্ষার প্রসার করা।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ঘুষ সংস্কৃতি একটি প্রধান বাধা। জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কার্যকর আইন প্রয়োগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ঘুষের বিরুদ্ধে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা থাকলে দেশ একটি শুদ্ধ ও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।