দুই তরুণের পরিচয় হয়েছিল এক কলেজ ক্যাম্পাসে, চট্টগ্রাম কলেজে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। প্রথম আড্ডা শুরু হয়েছিল জনপ্রিয় সিরিজ ‘ব্রেকিং ব্যাড’ নিয়ে, কিন্তু দিনশেষে তা গড়ে তোলে এমন এক বন্ধুত্ব, যা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পৌঁছেছে দুই ভিন্ন কিন্তু শীর্ষ গন্তব্যে—বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং দেশের মেডিকেল কলেজগুলোর সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায়।
তোফায়েল আহমেদ ও সানজিদ অপূর্ব বিন সিরাজ—নাম দুটি এখন শুধুই বন্ধু নয়, বরং তারা পরিণত হয়েছে এই প্রজন্মের অনুপ্রেরণায়। সিনেমা, গান, সিরিজ আর বইয়ের প্রতি আগ্রহের জায়গা থেকেই যে বন্ধুত্বের সূচনা, তা ধীরে ধীরে পরিণত হয় এক ধরনের চিন্তাভাবনার মিল, লক্ষ্য অর্জনের প্রতি পারস্পরিক অনুপ্রেরণায়। একসঙ্গে সিনেমা দেখা, নতুন গান আবিষ্কার করা, প্রিয় বইয়ের পৃষ্ঠা একসাথে ভাগ করে নেওয়া—সবকিছু মিলেই গড়ে ওঠে তাদের এক গভীর মানসিক বন্ধন।
কিন্তু সেই বন্ধুত্ব শুধু বিনোদনের গণ্ডিতেই আটকে থাকেনি। দুজনেই একে অপরের জন্য হয়ে উঠেছিল ‘স্টাডি বাডি’। ক্লাসে ভালো করা, নিজের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা, রাতে পড়ার সময় একে অপরকে মেসেজে মোটিভেট করা—সবই চলেছে সমান্তরালভাবে। তোফায়েল তার বুয়েটের স্বপ্ন পূরণ করেছেন এই বছরের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনের মাধ্যমে, আর সানজিদ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেশের দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে দেখিয়েছেন অসাধারণ সাফল্যের আরেক উদাহরণ।
তাদের এই যৌথ সাফল্য কেবল একাডেমিক কৃতিত্ব নয়, বরং একটি নিঃস্বার্থ, গভীর বন্ধুত্বের ফসল। বর্তমান সময়ের প্রতিযোগিতামূলক সমাজে যেখানে বন্ধুত্ব অনেক সময়েই স্বার্থের তলে চাপা পড়ে যায়, সেখানে তোফায়েল ও সানজিদের গল্প দেখায়—আসল বন্ধুত্ব কেবল সময় কাটানোর জন্য নয়, একে অপরকে এগিয়ে নিতে পারার ক্ষমতাই বন্ধুত্বের প্রকৃত রূপ।
এখন একজনে ঢুকে পড়েছেন দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, আর অন্যজন মেডিকেলের শীর্ষ সারিতে। হয়তো প্রতিদিন আর একসাথে সিনেমা দেখা হবে না, কিন্তু যে মানসিক বন্ধন তাদের গড়েছে, তা থাকবে আরও গভীর ও চিরস্থায়ী।
এই গল্প প্রমাণ করে, বন্ধুত্ব যখন হয় সত্যিকারের, তখন তা শুধু আনন্দ নয়—সাফল্যেরও সহযাত্রী হয়।