ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন নাসরিন আক্তার কখনো ভাবেননি যে তিনি একদিন বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা হবেন। স্নাতক শেষ করার পর তাঁর পরিকল্পনা ছিল সোজাসাপ্টা—কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা বা দ্রুত সময়ে সরকারি কোনো বিভাগে চাকরি পাওয়া। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। অনিয়মিত চাকরির বিজ্ঞপ্তি, চাকরির বাজারের অনিশ্চয়তা এবং অপ্রত্যাশিত কোভিড-১৯ লকডাউন তাঁকে নিজের পথ নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। তখনই তিনি নেন দীর্ঘ ও চ্যালেঞ্জিং বিসিএস যাত্রার সিদ্ধান্ত।
সিভিল সার্ভিস
নাসরিন জানান, তৃণমূল মানুষের কল্যাণে কাছ থেকে কাজ করার সুযোগ তাঁকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। “মানুষের জন্য সরাসরি কাজ করার সুযোগ আমার প্রতিদিনের প্রেরণা ছিল,” স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
পড়াশোনার রুটিন ও কৌশল
শুরু থেকেই নাসরিন শৃঙ্খলা ও পরিকল্পনার উপর গুরুত্ব দেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি একটি ছোট নোটবুকে কী পড়বেন এবং কখন পড়বেন তা লিখে রাখতেন।
প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি: নিজে নিজেই অসংখ্য মডেল টেস্ট দেন, গুরুত্বপূর্ণ নোট তৈরি করেন এবং নিয়মিত রিভিশন করতেন।
লিখিত পরীক্ষা: তিনি কনসেপ্ট পরিষ্কার করতে সাধারণ বই ও রেফারেন্স বই ব্যবহার করতেন এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ভালোভাবে বোঝার জন্য ইউটিউবে বিশ্লেষণধর্মী কনটেন্ট দেখতেন। তথ্য, উক্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলাদা নোটে লিখে রাখতেন। প্রতিদিন দুইটি পত্রিকা পড়া তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়। এছাড়া পূর্ববর্তী প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে উত্তর লেখায় বৈচিত্র্য ও শৃঙ্খলাপূর্ণ উপস্থাপনা বজায় রাখার চেষ্টা করেন।
দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা
প্রস্তুতি শুরুর আগে নাসরিন নিজের শক্তি ও দুর্বলতা বিশ্লেষণ করেন। গণিত ও ইংরেজিতে তাঁর ভালো দক্ষতা থাকায় সে দিকে কম সময় দেন। বরং আন্তর্জাতিক বিষয়ে বেশি সময় ব্যয় করেন, যেটিকে তিনি নিজের দুর্বল দিক মনে করতেন। এজন্য তিনি নিয়মিত আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিষয়ক বই পড়তেন এবং বিশ্ব সংবাদ চ্যানেল দেখতেন। এর ফলে লিখিত পরীক্ষায় বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নগুলো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দিতে পেরেছেন।
ভাইভা প্রস্তুতি
ভাইভার জন্য নাসরিন উচ্চারণ, কথা বলার দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য নিয়মিত অনুশীলন করেন। তিনি প্রায়ই নিজের সাথে কথোপকথন করতেন এবং পত্রিকা ও সাক্ষাৎকার সংক্রান্ত বই পড়ে হালনাগাদ থাকতেন। “ভাইভায় ব্যক্তিত্ব আসলেই প্রকাশ পায়,” বলেন তিনি।
সাফল্যের মূলমন্ত্র
নাসরিন মনে করেন, তাঁর মনোযোগ, কঠোর পরিশ্রম ও ধারাবাহিক রুটিনই সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি। তিনি পরিবার ও প্রিয়জনদের সহযোগিতা এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, যিনি তাঁকে এই অর্জন উপহার দিয়েছেন।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে নাসরিন বলেন, তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে চান। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার গর্বিত অংশীদার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন এবং সুস্বাস্থ্য ও সততার সাথে জাতিকে সেবা দিতে মানুষের ভালোবাসা ও দোয়া কামনা করেন।