অভিনেত্রী ও সংগীতশিল্পী মেহের আফরোজ শাওনের নতুন বিতর্কিত ফেসবুক পোস্ট আবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছে। তিনি সম্প্রতি জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাকে উদ্দেশ্য করে ‘নাটক কম করো পিও’ মন্তব্য করেছেন, যা নিয়ে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শাওন, যিনি শুধু একজন শিল্পী নন, বরং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। দলীয় মনোনয়নের জন্যও নাম দিয়েছেন। যদিও রাজনীতির এ পদক্ষেপের কারণে তাকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করেছিলো, পরে জিজ্ঞাসাবাদের পর মুক্তি পান। তারপরও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকছেন এবং সময়-সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসছেন।
রোববার, ১০ আগস্ট, শাওন তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন যেখানে তিনি নুসরাত ইমরোজ তিশাকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন। পোস্টে তিশার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ এবং শেখ হাসিনাসহ দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে তার বিভিন্ন ছবি শেয়ার করেন। এই পোস্টে শাওন লিখেন, ‘এই মেয়েটাকে ছোটবেলা থেকে চিনতাম। নতুন কুঁড়িতে আমার ছোট বোনের সঙ্গে একই ব্যাচে ছিল, একই গানের শিক্ষক থেকে সঙ্গীত শিক্ষা নিয়েছে। আমার বোন আমাকে ‘আপুনি’ ডাকতো, এই মেয়েটাও ‘আপুনি’ ডাকত। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদে আমার মায়ের সহকর্মী শাহিন মনোয়ারা হক (এমপি) ওর আত্মীয় ছিল, সম্ভবত খালা। সেই সময়ও প্রায়ই একই প্লাটফর্মে তার সাথে দেখা হত।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার পরিচালনায় ‘একলা পাখী’ ধারাবাহিকে অনেক দিন কাজ করেছি তার সঙ্গে। ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (এফডিসি)-র সভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে ‘ইনু মামা’ বলে সম্বোধন করতেন এবং মেয়েটাকে স্নেহ করতেন। ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি দেখিনি, দেখার ইচ্ছাও নেই। বাস্তব জীবনে তার অভিনয় দেখে আমি শখ মিটিয়েছি।’
শেষে শাওন তার পোস্টের সঙ্গে #নাটক_কম_করো_পিও হ্যাশট্যাগ দেন।
এই পোস্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। তবে নুসরাত ইমরোজ তিশা এখনো এই সমালোচনার প্রতিক্রিয়া দেননি।
এই ঘটনা মূলত শিল্পী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শাওনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও তিশাকে কেন্দ্র করে তার ব্যক্তিগত মতামতের প্রতিফলন। তিশা, যিনি বিগত সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক সিনেমায় শেখ ফজিলাতুন্নেসার চরিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হয়েছেন, তার প্রতি এমন সরাসরি আক্রমণ অনেকে অবাক করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিতর্ক নিয়ে নানা মতামত শোনা যাচ্ছে। কেউ শাওনের এই মন্তব্যকে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ এটিকে শিল্পী হিসেবে তিশার সম্মানহানিকর বলে মনে করছেন। অনেকেই মনে করছেন, ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকলেই শিল্পী হিসেবে একজনের কাজের সঠিক বিচার হওয়া উচিত নয়।
শাওনের এই নতুন সমালোচনা এবং তিশার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না আসা—সব মিলিয়ে এই বিতর্ক এখনো মীমাংসিত হয়নি। এ ঘটনায় দুই শিল্পীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং সমাজের মধ্যে শিল্পীদের জায়গা ও সম্মান নিয়ে নতুন প্রশ্নও উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা চলছেই। অনেকেই আশা করছেন, ভবিষ্যতে শিল্পীদের মধ্যে সম্মানজনক ও প্রফেশনাল সম্পর্ক বজায় থাকবে, যাতে ব্যক্তিগত মতভেদ শিল্প জীবনে প্রভাব ফেলতে না পারে।
এছাড়া, শাওনের এমন সোজাসাপ্টা ও সরাসরি সমালোচনা নতুন করে ভাবায়—কীভাবে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচিতির ছত্রছায়ায় কোনো শিল্পী নিজের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায় এবং তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কিভাবে সমাজের সামনে আসে।
শেষ কথা হলো, দুই প্রতিভাবান এই অভিনেত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক ও সংঘাত কেমন হবে, সেটাই এখন দর্শক ও সাধারণ মানুষের কৌতূহলের বিষয়। আর এটি ভবিষ্যতে কোনো ধরনের পেশাদার বা ব্যক্তিগত উত্তেজনায় পরিণত হবে কিনা সেটাই সময়ই বলবে।