নবীন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এখন দৈনন্দিন জীবনের নানা ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। তবে সেই প্রযুক্তির উপর অন্ধ বিশ্বাস কখনো কখনো বিপদ ডেকে আনতে পারে—একই ঘটনার উদাহরণ দাঁড়িয়ে গেল সাম্প্রতিক এক রোগীর জীবনযাত্রায়।
মার্কিন চিকিৎসা সাময়িকী ‘অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এক ব্যক্তির কাহিনি, যিনি চ্যাটজিপিটির পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট চার্ট মেনে চলার সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে, এমনকি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাঁকে।
ওই ব্যক্তি প্রায় তিন মাস ধরে নিয়মিত ‘সোডিয়াম ব্রোমাইড’ গ্রহণ করছিলেন, যা তিনি ডায়েটে লবণের বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, ক্লোরাইডের পরিবর্তে ব্রোমাইড গ্রহণ করাই নিরাপদ। এই ভুল তথ্যটি ছিল চ্যাটজিপিটির পরামর্শের ভিত্তি, যেখানে সোডিয়াম ব্রোমাইডের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কোনো সতর্কতা প্রদান করা হয়নি।
৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখা হলেও, তাঁর শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দুঃখজনক। কিছুদিন আগে তিনি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন, অভিযোগ করেন তার প্রতিবেশিরা তাঁকে বিষ প্রয়োগ করেছে। তবে চিকিৎসকরা তার আচরণ ও লক্ষণ থেকে বুঝতে পারেন যে বিষয়টি বিষক্রিয়ার, বরং মানসিক অসুস্থতার। তিনি তৃষ্ণার্ত থাকলেও পানির প্রতি আকৃষ্ট নন, পাশাপাশি তিনি হ্যালুসিনেশনে ভুগছিলেন—যা ব্রোমাইড বিষক্রিয়ার একটি পরিচিত লক্ষণ।
চিকিৎসকেরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখে ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড ও অ্যান্টি-সাইকোটিক ওষুধ প্রদান করলে তাঁর অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। সুস্থ হওয়ার পর তিনি জানান, অতিরিক্ত লবণের বিকল্প হিসেবে সোডিয়াম ব্রোমাইড খাওয়ার পেছনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দেয়া পরামর্শ ছিল। তবে তিনি ব্রোমাইডের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
দ্রষ্টব্য যে, সোডিয়াম ব্রোমাইড মূলত ব্যবহৃত হয় উদ্বেগ এবং অনিদ্রার চিকিৎসায়, তবে দীর্ঘদিন ধরেই এর নিরাপত্তাজনিত কারণবশত এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে সীমাবদ্ধ এবং বাতিল করা হয়েছে। আজকাল এটি কেবলমাত্র কিছু প্রাণীর ওষুধ এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্যে সীমিত পরিমাণে পাওয়া যায়।
এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দেওয়া তথ্য সবসময় সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য নাও হতে পারে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়ে। এমনকি AI প্ল্যাটফর্মগুলোতে সতর্কতা এবং সঠিক ব্যবহারের নির্দেশাবলী না থাকার ফলে ব্যবহারকারীরা ভুল পথে যেতে পারেন।
চিকিৎসকরা এই ঘটনার পর সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ যেন অবৈজ্ঞানিক বা অনভিজ্ঞ পরামর্শের কারণে এমন ঝুঁকিতে না পড়ে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবসময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ এবং স্বয়ং AI থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করা জরুরি।
সর্বোপরি, প্রযুক্তির অগ্রগতি যেমন আমাদের জীবন সহজ করে, তেমনি দায়িত্বশীল ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাও বাড়িয়ে দেয়। একেকটি প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা বোঝা এবং প্রজ্ঞার সঙ্গে তা গ্রহণ করাই স্মার্ট ব্যবহারকারীর পরিচয়।
এই রোগীর হাসপাতালের তিন সপ্তাহের চিকিৎসার পর অবস্থা স্থিতিশীল হলেও, তাঁর অভিজ্ঞতা সবাইকে একটি বড় শিক্ষা দেয়—স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো সিদ্ধান্তে AI-র পরামর্শ একমাত্র নির্ভরযোগ্য উৎস নয়, বরং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অপরিহার্য।