চট্টগ্রাম, ৭ আগস্ট ২০২৫ — পণ্য হ্যান্ডলিং ও জাহাজ ভেড়ানোর ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সাফল্য পেলেও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে শঙ্কায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ২২৭ কোটি টাকার আয় করেছে, যার মধ্যে কর ও ভ্যাট হিসেবে ১ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে সরকারি কোষাগারে। কিন্তু একইসঙ্গে বেড়েছে পণ্যবাহী জাহাজের গড় অবস্থানকাল — যা বাড়তি খরচ ও সময়ক্ষেপণের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমদানিকারক ও রফতানিকারকদের জন্য।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, গত অর্থবছরে মোট ৩২ লাখ ৯৬ হাজার টিইইউ কনটেইনার ও ১৩ কোটি ৭ লাখ মেট্রিক টন পণ্য হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। বন্দরে নোঙর করেছে ৪ হাজার ৭৭টি জাহাজ। এসব কার্যক্রম থেকেই আসে বিপুল রাজস্ব। তবে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, অবকাঠামো ও অপারেশনাল সীমাবদ্ধতার কারণে বন্দরের সক্ষমতা ও গতিশীলতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ছে না।
আগে যেখানে একটি জাহাজ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য খালাস করে বন্দর ত্যাগ করতো, সেখানে এখন একই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এই বিলম্বের কারণে বাড়তি ভাড়াভিত্তিক চার্জ, ডেমারেজ ও অপারেশনাল খরচ বহন করতে হচ্ছে আমদানি ও রফতানি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান জানান, “আমরা এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যখন প্রতিযোগী দেশগুলোর বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম দ্রুত শেষ হচ্ছে। আমাদেরও চট্টগ্রাম বন্দরে সেই সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। না হলে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা করা কঠিন হবে।”
বন্দর কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশাবাদী। প্রতিষ্ঠানটির সচিব ওমর ফারুক বলেন, “লাভজনক অবস্থানের কারণে আমাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন সহজ হবে। উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমেই ব্যবহারকারীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে।”
বন্দর সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ বলেন, “ইতিমধ্যে অনলাইন পেমেন্ট চালু হয়েছে। সামনে আরও ডিজিটাল সেবা চালু করা হবে, যাতে ব্যবহারকারীরা দ্রুত এবং সহজে সেবা নিতে পারেন।”
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮.২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ৫ হাজার ২২৭ কোটি টাকা আয় করেছে, যেখানে আগের বছর এই পরিমাণ ছিল মাত্র ২ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। মোট আয়ের মধ্যে ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকার উদ্বৃত্ত থাকায় বন্দর অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
তবে ব্যবসায়ী মহলের মতে, শুধু রাজস্ব আয় নয়, আন্তর্জাতিক মানের দ্রুততা ও সেবা নিশ্চিতে এখনই বন্দর আধুনিকীকরণে জোর দেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে প্রতিযোগী বন্দরগুলোর তুলনায় পিছিয়ে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে।
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম ১০০ বন্দর তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর বর্তমানে ৬৭তম স্থানে রয়েছে। এই অবস্থান ধরে রাখার পাশাপাশি আরও উপরের দিকে উন্নীত করতে হলে কেবল রাজস্ব বাড়ানো নয়, কার্যক্রমে গতিশীলতা, প্রযুক্তির ব্যবহার ও সময় ব্যবস্থাপনাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।