ঢাকা, ৭ আগস্ট: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিকটবর্তী কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ গেরিলা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার মেজর (অব.) সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন আদালতের সামনে দাবি করেছেন, ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতি ছিল স্বল্প সময়ের এবং পূর্বনির্ধারিত কোনো আয়োজনের সঙ্গে তারা যুক্ত নন। তিনি আদালতে বলেন, “আমরা আমন্ত্রণ পেয়ে কিছু সময়ের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম মাত্র।”
বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাকে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন, অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিন ও রিমান্ড বাতিলের আবেদন জানান। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।
আদালতে সুমাইয়া জাফরিনের বক্তব্য
রিমান্ড শুনানির সময় সুমাইয়া জাফরিন বিচারকের উদ্দেশে বলেন, “আমার হাজবেন্ড ও আমি সেখানে ইনভাইটেশন পেয়ে গিয়েছিলাম। জায়গাটা আমরা ভাড়া দিইনি, কেউ একজন এএসপি পরিচয়ে কনভেনশন সেন্টারটি ভাড়া নেয়। এখন দায়টা আমার উপর চাপানো হচ্ছে। আমি দয়া করে অনুরোধ করছি, আমাকে রিমান্ডে দেবেন না। আমি নিজে কোনো অপরাধ করিনি। কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞাসা করুন, আমি সব উত্তর দেব।”
কী ঘটেছিল কে বি কনভেনশন সেন্টারে?
পুলিশের দাবি অনুযায়ী, গত ৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বসুন্ধরার পাশে কে বি কনভেনশন সেন্টারে একটি গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কথিত ‘গেরিলা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম’ পরিচালিত হয়। এ ঘটনায় ১৩ জুলাই ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।
মামলার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে ২২ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের ধারাবাহিকতায় বুধবার (৬ আগস্ট) সুমাইয়া জাফরিনকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়।
বিতর্ক ও বিভ্রান্তি
এ ঘটনায় আরও বিতর্ক তৈরি হয়েছে সুমাইয়া জাফরিনের পরিচয় ঘিরে। সামাজিক মাধ্যমে তার পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে পুলিশের সদর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “সুমাইয়া জাফরিন নামে পুলিশের কোনো নারী কর্মকর্তা নেই।” তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো নিশ্চিত করে জানানো হয়নি তার প্রকৃত পেশাগত বা রাজনৈতিক পরিচয়।
নিষিদ্ধ এই কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গোপন বৈঠক, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, এবং এর পেছনে কারা ছিল—তা নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। সুমাইয়া জাফরিনের মতো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম উঠে আসায়, পুরো ঘটনা আরও জটিল রূপ নিয়েছে।