রাজধানীর আলোচিত পারভেজ বেপারী হত্যা মামলায় এবার আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হলো জনপ্রিয় অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিককে। বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে এ সংক্রান্ত শুনানি শেষে আদেশ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই সামিউল ইসলাম গত ১২ আগস্ট আদালতে আবেদন করেন সিদ্দিককে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য। আদালত তখন আসামির উপস্থিতিতে শুনানি গ্রহণের দিন ধার্য করেন। আজ সকালে সিদ্দিককে আদালতে হাজির করা হলে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক তার গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

মামলার পটভূমি
মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ঢাকার গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে আন্দোলনে অংশ নেন ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী পারভেজ বেপারী। আন্দোলনের মধ্যেই আসামিদের ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে নিহত পারভেজের বাবা মো. সবুজ ২ জুলাই গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের পাশাপাশি কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়। ধীরে ধীরে তদন্তের অগ্রগতিতে অভিনেতা সিদ্দিকের নাম উঠে আসে।
সিদ্দিকের আটক ও পরবর্তী পদক্ষেপ
২০২৫ সালের ২৯ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোড থেকে সিদ্দিককে আটক করে একদল যুবক। পরবর্তীতে তাকে মারধর করে রমনা মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। সেখান থেকে তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ পরদিন আদালতের অনুমতি নিয়ে সিদ্দিককে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। আজকের আদেশের মাধ্যমে এখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হলেন।

আদালতে শুনানির বিবরণ
শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করে, সিদ্দিকের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং তিনি সরাসরি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, সিদ্দিক একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে।
বিচারক উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর তদন্তের স্বার্থে এবং মামলার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেন।
পরবর্তী কার্যক্রম
আইনজীবীরা জানান, আগামী দিনগুলোতে সিদ্দিকের জামিন আবেদন করা হতে পারে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, তদন্ত কার্যক্রমের স্বার্থে আসামিকে কারাগারে রাখা প্রয়োজন।
এই মামলার ফলে শুধু আইন অঙ্গন নয়, সংস্কৃতি অঙ্গনেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নাটক ও চলচ্চিত্রে কাজ করা অভিনেতা সিদ্দিক তার জনপ্রিয়তার কারণে সাধারণ দর্শকের কাছে পরিচিত মুখ। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ দর্শক ও ভক্তদের বিস্মিত করেছে।